
প্রকাশিত: Wed, May 29, 2024 3:20 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 2:16 AM
ভোট-নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান জনতার রুখে দাঁড়ানো
হাসনাত এ কালাম
পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যু দিবসে দুইটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা মনে পড়লো। নেহেরু যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন, তখন তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণকে ডেকে বললেন, আপনারা বিরোধী দল তৈরি করেন। আর উনার ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের বললেন, শক্তিশালী বিরোধী দল তৈরি করতে যত টাকা দরকার উনাদের দেন। আমাদের কোনো টাকার দরকার নাই আপাতত। সেই সময় উনার পাকিস্তানি কাউন্টারপার্ট গণতন্ত্র হঠায়ে কয়েকজন আমলা ও কয়েক সামরিক প্রশাসক দিয়ে দেশ চালাইতে চাইলো। যার বদৌলতে একটা কালচারের বৈপরীত্য তৈরি হলো। এই যে নরেন্দ্র মোদীর মতন নেতা আসলেও ভারতে ভোট হয়। ঘাম ঝরিয়ে একটা সিট জিততে হয়। কোনোদিন মিলিটারি শাসন আসেনি। আর পাকিস্তানে আজও একটা গণতান্ত্রিক সরকার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি ৬০ বছরে। মিলিটারির কথায় দেশ চলে। তা ওই সময়ে দুই দেশে দুই প্রায়োরিটির আজকের সিলসিলা।
আরেকটা ঘটনা- চিন ভারত যুদ্ধের সময় নেহেরুর জনপ্রিয়তা যখন শীর্ষে, কেউই উনার বিরুদ্ধে কলাম লিখছে না। তাই উনি নিজেই ছদ্মনামে কলাম লিখেন, নিজের সমালোচনা করে। তাও বিদেশি পত্রিকায়- ঔধধিযধৎষধষ পধহহড়ঃ নবপড়সব ধ ভধংপরংঃ. অহফ ুবঃ যব যধং ধষষ ঃযব সধশরহমং ড়ভ ধ ফরপঃধঃড়ৎ রহ যরস. ঐব সঁংঃ নব পযবপশবফ. ডব ধিহঃ হড় ঈধবংধৎং. পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো সরকারপ্রধান নিজের বিরুদ্ধে কলাম লিখে ছদ্মনামে নিজের সমালোচনাকে উৎসাহ দেয়নি এভাবে। পাকিস্তান যখন রাষ্ট্রের ইসলামাইজেশন করছে, কোনো সংবিধান তৈরি করতে পারেনি ২৩ বছরেও। তখন পন্ডিত নেহেরু সংবিধান লেখার দায়িত্ব দিলেন দলিত (পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধ) বাবাসাহেব আম্বেদকরকে। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দিলেন মুসলমান মৌলানা আজাদকে। পার্লামেন্টেরি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিলেন একজন দলিতকে। যে স্পিরিটের ফলাফল হাতেনাতেই উনার মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী পেয়েছিল কয়েক দশক পর।
১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথাই ধরি। ভারতের জড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধও তো হয়। সেই যুদ্ধে ভারত জিতলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় এদিকে ইন্ডিয়ার বিমানবাহিনীর এয়ার কমান্ডার একজন মুসলিম, এয়ার ভাইস মার্শাল ইদ্রিস হাসান লতিফ। ইস্টার্ন কমান্ডার ছিলেন একজন ইহুদি জেনারেল জ্যাকব। ইন্ডিয়ান ফোর্সের চিফ অফ স্টাফ ছিল একজন অগ্নি উপাসক পার্সী, জেনারেল রুস্তমজি। ডিপ্লোমেটিক কোরের প্রধান ছিল ডিপি ধর, একজন নাস্তিক। আর আত্মসমর্পণ দলিলে সিগনেচার করান একজন জেনারেল যিনি ছিলেন শিখ, জেনারেল আরোরা। কমান্ডো বাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ছিল একজন খ্রিস্টান, ইয়ান কার্ডোজো। এরা সবাই মিলেই ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল যুদ্ধকৌশল ও জয়টি অর্জন করেছিল। ভারতের গণতন্ত্রও হোঁচট খেয়েছিল। খোদ নেহেরুর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধীই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরেই নির্বাচনে হেরে তারপর আবার ভোট ভিক্ষা করে পরের টার্মে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন অবধি ভারতের ক্ষমতা বদলের মূল ক্রীড়ানক-টি জনগণের হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ। নরেন্দ্র মোদীর মতন সাম্প্রদায়িক লোকটি ক্ষমতায় এলেও গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তাকে তাড়াতে একাট্টা হয়েছেন, তারাও গণতন্ত্রের মাধ্যমেই আসতে চান। খোদ নেহেরুর নাতি-পূত্র রাহুল গান্ধী সারা ভারত হাঁটছেন, পায়ে হেঁটে ভোটের পাল্লা ভারী করতে আর বিরোধী রাজনীতি সঞ্চার করার জন্য। কিন্তু ভিত্তিটি ওই গণতন্ত্র-ই।
বারাক ওবামার আত্মজীবনী অ ঢ়ৎড়সরংবফ ষধহফ- এ রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎকারের কথা বলেছেন। সেখানে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে উনি মূল্যায়ন করেছেন-ক্লাসের এক নার্ভাস ছাত্র যে সাধারণ কোর্সওয়ার্কটি করেই ইমপ্রেস করতে চায়। কিন্তু গোপনে মনের গভীরে এই কোর্সটি নিয়েই তার প্যাশনের ঘাটতি আছে কিংবা সে জানে সে নিজেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত না। আমার মনে হয়েছে, খুবই যুতসই মূল্যায়ন এটা। গণতন্ত্রের জন্য যে কঠিন রুক্ষ পাড়ি দিতে হয়, তার জন্য রাহুল গান্ধীর প্যাশনের অভাব ছিল। খুব সাধারণ কোর্সওয়ার্ক মনে করতেন নরেন্দ্র মোদীর মতো লোককে হারানোর ব্যাপারটাকে। কিন্তু গত ৪-৫ বছরে উনার অভূতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের সাথে মিশছেন। দিনের পর দিন রাস্তায় হাঁটছেন, মানুষের সাথে আত্মিক সম্পর্কটা করতে। ফলাফলও ভালো পেয়েছেন গত কয়েকটি নির্বাচনে। বিশেষ করে উনার এপ্রুভাল রেটিং যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আশা করি, এই নির্বাচনেই তিনি ইতিবাচক সাফল্যের সূচনা করবেন।
জিততে না পারলেও। মোদ্দা কথাটা হইলো, গণতন্ত্র কোনো সোনার পাথরবাটি না এবং খুবই ছাঁচাছোলা কনসেপ্ট। অনেক সময় অপছন্দের এবং ক্ষতিকর শাসকও আসে। কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য লড়াই থাকলে, জনগণের ভোটের ছাপ ভালো লিডারটিকে আরও ভালো করে তুলে। তিনি নির্বাচনে হারলেও। আর খারাপ লিডারটির চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স রাখা সম্ভব হয়। উপমহাদেশীয় পলিটিক্সের ফাকবয় নেহেরু এটা বুঝেছিলেন। তাই তার দেশে মিলিটারি এসে ক্ষমতা ঠিক করে দেয় না। কিন্তু পাকিস্তান ও বাংলাদেশে যথাক্রমে মিলিটারি আর আমলাদের লাগে গণতন্ত্রের কাতার সোজা করতে, যেখানে তারা নিজেরাই ফাকড-আপ করে।
গণতন্ত্রে আপনার অপছন্দের প্রার্থী জিতে। আপনার পিএইচডি ওয়ালা বুড়ো আঙুলের সমান মর্যাদা পায় পাড়ার কাজের মহিলার বুড়ো আঙুলের ছাপ। এই জন্য যদি মন খারাপ করে আপনি গণতন্ত্র কুক্ষিগত করতে চান। ভোট ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান নষ্ট করতে চান।
তাহলে বুঝবেন, মানুষ একদিন হলেও আপনারে রুখে দাঁড়াবে। সবচেয়ে কম সুযোগেও আপনারে চটকানা দিবে। তখন আপনার ভাষায় সজ্জন ও শিক্ষিত প্রার্থীও ডুবে যাবে, জনগণের সম্মিলিত ঘেন্নায়। মানুষের বুড়ো আঙুলের ছাপ এজন্যই খুবই শক্ত রেটরিক। এই সম্মানবোধটুকুই মূলত স্মার্ট রাজনীতি। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
